শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

বাঘায় কারাবন্দী প্রার্থীর জয়ে স্ত্রীর মুখে হাসি ফুটালেন ভোটাররা

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:: আ’লীগ এর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক নুর মোহাম্মদ (তুফান)। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর, বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনিসহ আরো কয়েকজন। আর দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন পান উপজেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক ও ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান (শফিক)। অন্যরা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেও সিদ্ধান্তে অটল থেকে নির্বাচনে অংশ নেন নুর মোহাম্মদ।

গত ৪ ডিসেম্বর রাতে নুর মোহাম্মদ এর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য তার টলটলিপাড়ার বাড়িতে যান উপজেলা আ’লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। কিন্তু নেতাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান নুর মোহাম্মদ। সেই রাতে তার বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৫ ডিসেম্বর সকালে নুর মোহাম্মদসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে দল থেকে বহিস্কার করা হয় নুর মোহাম্মদকে। কারাবন্দী নুর মোহাম্মদ এর পক্ষে গ্রাম মহল্লা ঘুরে ঘুরে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন তার স্ত্রী রোজিনা আকতারি পলি। কিন্তু বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার লাগানো, মাইকিংসহ নির্বাচনের কোনো কিছুই সেভাবে হয়নি। তার পরেও জয় ঠেকানো যায়নি নুর মোহাম্মদ (তুফান) এর। শেষ পর্যন্ত কারাবন্দী স্বামীর জয়ে স্ত্রীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ভোটাররা। তিনিই হাসলেন জয়ের হাসি। জেল থেকেই বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নুর মোহাম্মদ তুফান। জামিন না পেয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগের (বহিস্কৃত) বিদ্রোহী প্রার্থী নুর মোহাম্মদ তুফান মোটরসাইকেল প্রতীকে ৮ হাজার ১৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান শফিক পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২৮ ভোট। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (পলাশ) আনারস প্রতীকে ৫ হাজার ৪০১ ভোট পেয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নুর মোহাম্মদকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে অব্যাহতভাবে চাপ দিতে থাকেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা নুর মোহাম্মদ (তুফান)’র টলটলিপাড়ার বাড়িতে যান। তাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় হামলা চালায়। বহিরাগতদের হামলার খবরে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগ কতিপয় নেতাদের ধরে গণপিটুনি দেয় ও তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরেরদিন (৫ ডিসেম্বর) বাঘা থানায় মামলা করতে গেলে, আ’লীগ নেতার দায়েরকৃত একটি মামলায় নুর মোহাম্মদসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। আদালত কয়েক দফা তার জামিন নামঞ্জুর করেন।

নুর মোহাম্মদ (তুফান)’র স্ত্রী রোজিনা আকতারি পলি বলেন, নানান ঘটনায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। এরপরেও ব্যালটের মাধ্যমে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে আমার স্বামী নুর মোহাম্মদ (তুফান)কে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন ভোটাররা। এই বিজয় বাউসার সাধারন মানুষের। গায়ের জোরে যারা আমার স্বামীকে ভোট থেকে সরাতে চেয়েছিল, জনগণ তাদের লাল কার্ড দেখিয়েছে। বাউসার জনগণের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য, ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থধাপে বাঘা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অপর দুটি ইউনিয়ন-আড়ানি ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৪২২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২৯২৪ ভোট,ওয়কার্স পার্টির এনামুল হক হাতুড়ি মার্কা প্রতীকে পেয়েছেন ৯৭ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাতাব আলী মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ১৪২ ভোট। চকরাজাপুর ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় প্রার্থী ডিএম বাবুল মনোয়ার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪২২২ ভোট, তার নিকটতম বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী আজিজুল আলম (আনারস প্রতীকে ৩১০১)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com